সরকারি খাদ্য গুদামের অনুমানিক পৌনে ২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে যাওয়া দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি এলএসডির সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দুদকের দিনাজপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের নিকট মামলা দায়ের করেছেন দুদকের একই কার্যালয়ের সহাকরী পরিচালক ইসমাইল হোসেন।
মামলার আসামিরা হলেন, ডুগডুগি এলএসডির উপপরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) আনোয়ারা বেগম, ঘোড়াঘাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনুস আলী মন্ডল, খাদ্যগুদামের নিরাপত্তা প্রহরী (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) মফিজুল ইসলাম ও কুলি সর্দার শাহিনুর আলম।
উল্লেখ্য, গতবছর ৭ মে দৈনিক কালবেলাতে "পৌনে দুই কোটি টাকার চাল নিয়ে উধাও খাদ্য কর্মকর্তা"শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে দুদকের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের একটি অনুসন্ধানী দল খাদ্যগুদামে চাল ও বস্তা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে কাজ শুরু করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একটি অনুসন্ধানী তদন্ত করেন দুদক। পরে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা গত জানুয়ারি মাসে দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলার অনুমোদন দেয় দুদকের প্রধান কার্যালয়। আজ রোববার বিকেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে আসামি করে দুদকে এ মামলাটি হয়।
এদিকে দুদক মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডুগডুগি এলএসডিতে ৫০০ মেট্রিক টন করে ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি খাদ্যগুদাম রয়েছে। গোডাউনের খামাল এলোমেলো থাকা সংক্রান্ত একটি তথ্যের ভিত্তিতে গত বছর ২৮ এপ্রিল দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি গত ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ডুগডুগি এলএসডি পরিদর্শন করেন। এ সময় এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম তাঁর কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ২ মে তদন্ত কমিটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসানের উপস্থিতিতে ডুগডুগি এলএসডির ২টি গুদামের তালা ভাঙেন। টানা চার দিন ২ মে থেকে ৬ মে তদন্ত কমিটি বাস্তব মজুত যাচাই করে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি পান। পরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী দুইটি খাদ্যগুদামে চাল রেকর্ডে থাকার কথা ১০৬৪ দশমিক ১৫৫ টন। কিন্তু মজুত পাওয়া যায় ৭৪৫ দশমিক ১৪ টন। ঘাটতির পরিমাণ ৩১৯ দশমিক ১৪১ টন। আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ প্রতি টন ৫২ হাজার ৪৭২ টাকা হিসেবে ৩১৯ দশমিক ১৪১ টনের মূল্য ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৯ টাকা। অন্যদিকে ৫০ কেজি ওজনের খালি বস্তা ঘাটতি পাওয়া যায় ৪ হাজার ২৭৮টি। প্রতিটি ৯০ টাকা হারে মূল্য ৩ লাখ ৮৫ হাজার ২০ টাকা। অর্থাৎ আত্মসাত করা অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৯ টাকা।
দুদকের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘোড়াঘাট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইউনুস আলী মন্ডল, ডুগডুগি এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম, নিরাপত্তা প্রহরী মফিজুল ইসলাম ও কুলি সর্দার শাহিনুর আলম পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ও বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে এক কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন মর্মে অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী দুদকের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলার ডুগডুগি এলএসডিতে এক কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ২৭৯ টাকার সরকারি চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের অভিযোগে রোববার বিকেলে ৪ জনকে আসামি করে দুদকে একটি মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতামত