গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের কৃষকরা । আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত জাতের ব্যবহার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ অঞ্চলের কৃষকরা গরমকালেও উচ্চ ফলনশীল তরমুজ উৎপাদন করে ভালো লাভবান হচ্ছেন।
ভিয়াইল ইউনিয়নের তরমুজ চাষি রবিউল যানান , এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় তিনি ২০ শতক জমিতে রঙিলা সুগার কিং ও সুইট ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেন। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ক্ষেতেই প্রতি কেজি তরমুজ ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ, বীজ ও মাচা তৈরিতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা’। খরচ বাদে আড়াই মাসের এ আবাদে ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাঁর তরমুজ চাষ দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে তাঁর কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জমিতে চাষ দিয়ে পরিমাণ মতো সার ও জৈব সার প্রয়োগ করি। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেই। পরে চারা রোপণ করি। এর দুই-তিন দিন পর জমিতে সেচ দিই। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গাছে খুঁটি এবং ১৫-২০ দিন পর মাচা তৈরি করে দিই। পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম। ফল বড় হওয়ার সময় জালি দিয়ে বেঁধে দিয়েছি, যেন গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে। গাছ লাগানোর ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়।’
স্থানীয় কৃষকরা আব্দুল হাকিম জানান, প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫–৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি শেষে ৬০–৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী ধান চাষের পাশাপাশি তরমুজ এখন বিকল্প লাভজনক ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। চাষাবাদে মালচিং, ড্রিপ সেচ ও জৈব-রাসায়নিক সারের সুষম প্রয়োগের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় গরমেও ভালো ফলন সম্ভব হচ্ছে বলে কৃষকেরা জানান।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, “গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর ভিয়াইল ইউনিয়নের চারজন কৃষক-কে দিনাজপুর টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ, ওষুধসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। সহায়তা পেয়ে তারা তরমুজ চাষ শুরু করেন। ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা বেশ লাভবান হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি।” পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি হলে চিরিরবন্দরের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম অর্জন করতে পারে।
মতামত