আগাম জাতের ধানের সোনালী আভায় ভরে গেছে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার ধান ক্ষেত। ধান যেন শুধু শস্য নয়, কৃষকের ঘামের বিন্দু বিন্দু স্বপ্ন কণা। বুকভরা আশায় তারা বুনেছেন এই ফসল। আর মাঠজুড়ে সোনালী ধান দোলায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।
তবে গেল বছরের তুলনায় এবারে ধানের দাম কিছুটা কম। তবুও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন বেড়েছে, খরচও কমেছে—ফলে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, এই আগাম জাতের ধান মাত্র ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায়। এরপর সেই জমিতেই মরিচ ও অন্যান্য সবজি আবাদ করে দ্বিগুণ লাভ তুলছেন তারা।
বিরল উপজেলার জগতপুর গ্রামের কৃষক মেহেরুল ইসলাম জানান- “গেল বছর প্রতি বিঘায় পেয়েছিলাম ২০ মন ধান, এবার পেয়েছি ২৮ মন। প্রতি বস্তা ধান বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। ফলে লাভবান হচ্ছি আমরা।”
একই এলাকার আরেক চাষি মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম জানান—“আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন খরচ কমেছে। দাম কম হলেও ফলন বেশি হওয়ায় আমরা লাভবান।”
বিরল উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান—“শুধু আমার এলাকাতেই প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদন বেড়েছে, খরচ কমেছে—তাই কৃষকরা সন্তুষ্ট।”
বিরল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা হক আখি বলেন—“এই ধান ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায়। তারপর সেই জমিতে মরিচ ও সবজি আবাদ করে কৃষকরা বাড়তি আয় করছেন। ফলে এই জাতের ধানের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।”
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন জানান—“চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৭১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত আরও ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আমন চাষ হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৪৫ হাজার হেক্টর। গড় ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩.১১ টন।”
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় প্রতিবছর গড়ে ১৪-১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়। আউশ, আমন ও বোরো—এই তিন মৌসুম মিলিয়ে জেলায় মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৩ লাখ মেট্রিক টন চাল।
মতামত